আলাউদ্দিনের চেরাগ (দ্বিতীয় অধ্যায়) (হুমায়ূন আহমেদ)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - আনন্দপাঠ | NCTB BOOK
3.8k

নান্দিনা পাইলট হাইস্কুলের অঙ্ক-শিক্ষক নিশানাথবাবু কিছুদিন হলো রিটায়ার করেছেন। আরো বছরখানেক চাকরি করতে পারতেন; কিন্তু করলেন না। কারণ দুটো চোখেই ছানি পড়েছে। পরিষ্কার কিছু দেখেন না। ব্ল‍্যাকবোর্ডে নিজের লেখা নিজেই পড়তে পারেন না।

নিশানাথবাবুর ছেলেমেয়ে কেউ নেই। একটা মেয়ে ছিল। খুব ছোটোবেলায় টাইফয়েডে মারা গেছে। তার স্ত্রী মারা গেছেন গত বছর। এখন তিনি একা একা থাকেন। তার বাসা নান্দিনা বাজারের কাছে। পুরান আমলের দু-কামরার একটা পাকা দালানে তিনি থাকেন। কামরা দুটির একটি পুরোনো লক্কড় জিনিসপত্র দিয়ে ঠাসা। তার নিজের জিনিস নয়। বাড়িওয়ালার জিনিস। ভাঙা খাট, ভাঙা চেয়ার, পেতলের তলা-নেই কিছু ডেগচি, বাসনকোসন। বাড়িওয়ালা নিশানাথবাবুকে প্রায়ই বলেন, এই সব জঞ্জাল দূর করে ঘরটা আপনাকে পরিষ্কার করে দেবো। শেষপর্যন্ত করেন না। তাতে নিশানাথবাবুর খুব একটা অসুবিধাও হয় না। পাশে একটা হোটেলে তিনি খাওয়া দাওয়া সারেন। বিকেলে নদীর ধারে একটু হাঁটতে যান। সন্ধ্যার পর নিজের ঘরে এসে চুপচাপ বসে থাকেন। তার একটা কেরোসিনের স্টোভ আছে। রাতের বেলা চা খেতে ইচ্ছা হলে স্টোভ জ্বালিয়ে নিজেই চা বানান।

জীবনটা তার বেশ কষ্টেই যাচ্ছে। তবে তা নিয়ে নিশানাথবাবু মন খারাপ করেন না। মনে মনে বলেন, আর অল্প-কটা দিনই তো বাঁচব, একটু না হয় কষ্ট করলাম। আমার চেয়ে বেশি কষ্টে কত মানুষ আছে। আমার আর আবার এমনকি কষ্ট।

একদিন কার্তিক মাসের সন্ধ্যাবেলায় নিশানাথবাবু তার স্বভাবমতো সকাল সকাল রাতের খাওয়া সেরে নিয়ে বেড়াতে বেরোলেন। নদীর পাশের বাঁধের ওপর দিয়ে অনেকক্ষণ হাঁটলেন। চোখে কম দেখলেও অসুবিধা হয় না, কারণ গত কুড়ি বছর ধরে এই পথে তিনি হাঁটাহাঁটি করছেন।

আজ অবশ্য একটু অসুবিধা হলো। তার চটির একটা পেরেক উঁচু হয়ে গেছে। পায়ে লাগছে। হাঁটতে পারছেন না। তিনি সকাল সকাল বাড়ি ফিরলেন। তার শরীরটাও আজ খারাপ। চোখে যন্ত্রণা হচ্ছে। বাঁ চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়ছে।

বাড়ি ফিরে তিনি খানিকক্ষণ বারান্দায় বসে রইলেন। রাত নটার দিকে তিনি ঘুমুতে যান। নটা বাজতে এখনো অনেক দেরি। সময় কাটানোটাই তার এখন সমস্যা। কিছু-একটা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারলে হতো। কিন্তু হাতে কোনো কাজ নেই। বসে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই। চটির উঁচু-হয়ে-থাকা পেরেকটা ঠিক করলে কেমন হয়? কিছুটা সময় তো কাটে। তিনি চটি হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। হাতুড়িজাতীয় কিছু খুঁজে পেলেন না। জঞ্জাল রাখার ঘরটিতে উঁকি দিলেন। রাজ্যের জিনিস সেখানে; কিন্তু হাতুড়ি বা তার কাছাকাছি কিছু নেই। মন খারাপ করে বের হয়ে আসছিলেন, হঠাৎ দেখলেন, ঝুড়ির ভেতর একগাদা জিনিসের মধ্যে লম্বাটে ধরনের কী-একটা যেন দেখা যাচ্ছে। তিনি জিনিন্সটা হাতে নিয়ে জুতার পেরেকে বাড়ি দিতেই অদ্ভুত কাণ্ড হলো। কালো ধোঁয়ায় ঘর ভর্তি হয়ে গেল।

তিনি ভাবলেন, চোখের গন্ডগোল। চোখ-দুটো বড়ো যন্ত্রণা দিচ্ছে। কিন্তু না, চোখের গন্ডগোল না। কিছুক্ষণের মধ্যে ধোঁয়া কেটে গেল। নিশানাথবাবু অবাক হয়ে শুনলেন, মেঘগর্জনের মতো শব্দে কে যেন বলছে, আপনার দাস আপনার সামনে উপস্থিত। হুকুম করুন। এক্ষুনি তালিম হবে।

নিশানাথবাবু কাঁপা গলায় বললেন, কে? কে কথা বলে?
: জনাব আমি। আপনার ডান দিকে বসে আছি। ডান দিকে ফিরলেই আমাকে দেখবেন।

নিশানাথবাবু ডান দিকে ফিরতেই তার গায়ে কাঁটা দিল। পাহাড়ের মতো একটা কী যেন বসে আছে। মাথা প্রায় ঘরের ছাদে গিয়ে লেগেছে। নিশ্চয়ই চোখের ভুল।
নিশানাথবাবু ভয়ে ভয়ে বললেন, বাবা তুমি কে? চিনতে পারলাম না তো।
: আমি হচ্ছি আলাউদ্দিনের চেরাগের দৈত্য। আপনি যে-জিনিসটি হাতে নিয়ে বসে আছেন এটাই হচ্ছে সেই বিখ্যাত আলাউদ্দিনের চেরাগ।
: বলো কী!
: সত্যি কথাই বলছি জনাব। দীর্ঘদিন এখানে-ওখানে পড়ে ছিল। কেউ ব্যবহার জানে না বলে ব্যবহার হয়নি। পাঁচ হাজার বছর পর আপনি প্রথম ব্যবহার করলেন। এখন হুকুম করুন।
: কী হুকুম করব?
: আপনি যা চান বলুন, এক্ষুনি নিয়ে আসব। কোন জিনিসটি আপনার প্রয়োজন?
: আমার তো কোনো জিনিসের প্রয়োজন নেই।
চেরাগের দৈত্য চোখ বড়ো বড়ো করে অনেকক্ষণ নিশানাথবাবুর দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর গম্ভীর গলায় বলল, জনাব, আপনি কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন?
: প্রথমে পেয়েছিলাম, এখন পাচ্ছি না। তোমার মাথায় ওই দুটা কী? শিং নাকি?
: জি, শিং।
: বিশ্রী দেখাচ্ছে।
চেরাগের দৈত্য মনে হলো একটু বেজার হয়েছে। মাথার লম্বা চুল দিয়ে সে শিং দুটো ঢেকে দেবার চেষ্টা করতে করতে বলল, এখন বলুন কী চান?
: বললাম তো, কিছু চাই না।
: আমাদের ডেকে আনলে কোনো-একটা কাজ করতে দিতে হয়। কাজ না করা পর্যন্ত আমরা চেরাগের ভেতর ঢুকতে পারি না।
অনেক ভেবেচিন্তে নিশানাথবাবু বললেন, আমার চটির পেরেকটা ঠিক করে দাও। অমনি দৈত্য আঙুল দিয়ে প্রচণ্ড চাপ দিয়ে পেরেক ঠিক করে বলল,
: এখন আমি আবার চেরাগের ভেতর ঢুকে যাব। যদি আবার দরকার হয় চেরাগটা দিয়ে লোহা বা তামার ওপর খুব জোরে বাড়ি দেবেন। আগে চেরাগ একটুখানি ঘষলেই আমি চলে আসতাম। এখন আসি না। চেরাগ পুরোনো হয়ে গেছে তো, তাই।
: ও আচ্ছা। চেরাগের ভেতরেই তুমি থাক?
: জি।
: কর কী?
: ও আচ্ছা। চেরাগের ভেতরেই তুমি থাক?
: জি।
: কর কী?
: ঘুমোই। তাহলে জনাব আমি এখন যাই।
বলতে বলতেই সে ধোঁয়া হয়ে চেরাগের ভেতর ঢুকে গেল। নিশানাথবাবু স্তম্ভিত হয়ে দীর্ঘ সময় বসে রইলেন। তারপর তার মনে হলো-এটা স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। বসে ঝিমাতে ঝিমাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুমের মধ্যে আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছেন।
তিনি হাতমুখ ধুয়ে শুয়ে পড়লেন। পরদিন তার আর এত ঘটনার কথা মনে রইল না। তার খাটের নিচে পড়ে রইল আলাউদ্দিনের বিখ্যাত চেরাগ।
মাসখানেক পার হয়ে গেল। নিশানাথবাবুর শরীর আরো খারাপ হলো। এখন তিনি আর হাঁটাহাঁটিও করতে পারেন না। বেশির ভাগ সময় বিছানায় শুয়ে-বসে থাকেন। এক রাতে ঘুমোতে যাবেন। মশারি খাটাতে গিয়ে দেখেন, একদিকের পেরেক খুলে এসেছে। পেরেক বসানোর জন্যে আলাউদ্দিনের চেরাগ দিয়ে এক বাড়ি দিতেই ওই রাতের মতো হলো। তিনি শুনলেন গম্ভীর গলায় কে যেন বলছে-
: জনাব, আপনার দাস উপস্থিত। হুকুম করুন।
: তুমি কে?
: সে কি! এর মধ্যে ভুলে গেলেন? আমি আলাউদ্দিনের চেরাগের দৈত্য।
: ও আচ্ছা, আচ্ছা। আরেক দিন তুমি এসেছিলে।
: জি।
: আমি ভেবেছিলাম- বোধ হয় স্বপ্ন।
: মোটেই স্বপ্ন না। আমার দিকে তাকান। তাকালেই বুঝবেন- এটা সত্য।
: তাকালেও কিছু দেখি না রে বাবা। চোখ-দুটো গেছে।
: চিকিৎসা করাচ্ছেন না কেন?
: টাকা কোথায় চিকিৎসা করার?
: কী মুশকিল! আমাকে বললেই তো আমি নিয়ে আসি। যদি বলেন তো এক্ষুনি এক কলসি সোনার মোহর এনে আপনার খাটের নিচে রেখে দেই।
: আরে না, এত টাকা দিয়ে আমি করব কী? কদিনই-বা বাঁচব।
: তাহলে আমাকে কোনো-একটা কাজ দিন। কাজ না করলে তো চেরাগের ভেতর যেতে পারি না।
: বেশ, মশারিটা খাটিয়ে দাও।
দৈত্য খুব যত্ন করে মশারি খাটালো। মশারি দেখে সে খুব অবাক। পাঁচ হাজার বছর আগে নাকি এই জিনিস ছিল না। মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যে কায়দা বের করেছে, তা দেখে সে মুগ্ধ।
: জনাব, আর কিছু করতে হবে?
: না, আর কী করবে! যাও এখন।
: অন্য কিছু করার থাকলে বলুন, করে দিচ্ছি।
: চা বানাতে পারো?
: জি না। কীভাবে বানায়?
; দুধ-চিনি মিশিয়ে।
: না, আমি জানি না। আমাকে শিখিয়ে দিন।
: থাক বাদ দাও, আমি শুয়ে পড়ব।
দৈত্য মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, আপনার মতো অদ্ভুত মানুষ জনাব আমি এর আগে দেখিনি।
: কেন?
: আলাউদ্দিনের চেরাগ হাতে পেলে সবার মাথা খারাপের মতো হয়ে যায়। কী চাইবে, কী না চাইবে, বুঝে উঠতে পারে না, আর আপনি কিনা...
নিশানাথবাবু বিছানায় শুয়ে পড়লেন। দৈত্য বলল, আমি কি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দেব? তাতে ঘুমোতে আরাম হবে।
: আচ্ছা দাও।
দৈত্য মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। নিশানাথবাবু ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুম ভাঙলে মনে হলো, আগের রাতে যা দেখেছেন সবই স্বপ্ন। আলাউদ্দিনের চেরাগ হচ্ছে রূপকথার গল্প। বাস্তবে কি তা হয়? হয় না। হওয়া সম্ভব না।
দুঃখেকষ্টে নিশানাথবাবুর দিন কাটতে লাগল। শীতের শেষে তার কষ্ট চরমে উঠল। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না এমন অবস্থা। হোটেলের একটা ছেলে দুবেলা খাবার নিয়ে আসে। সেই খাবারও মুখে দিতে পারেন না। স্কুলের পুরোনো স্যাররা মাঝে মাঝে তাকে দেখতে এসে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলেন। নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেন, এ-যাত্রা আর টিকবে না। বেচারা বড়ো কষ্ট করল। তারা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে তিন শ টাকা নিশানাথবাবুকে দিয়ে এলেন। তিনি বড়ো লজ্জায় পড়লেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিতে তার বড়ো লজ্জা লাগে।
এক রাতে তার জ্বর খুব বাড়ল। সেই সঙ্গে পানির পিপাসায় ছটফট করতে লাগলেন। বাতের ব্যথায় এমন হয়েছে যে বিছানা ছেড়ে নামতে পারছেন না। তিনি করুণ গলায় একটু পরপর বলতে লাগলেন- পানি, পানি।
গম্ভীর গলায় কে-একজন বলল, নিন জনাব পানি।
: তুমি কে?
: আমি আলাউদ্দিনের চেরাগের দৈত্য।
: ও আচ্ছা, তুমি।
: নিন, আপনি খান। আমি আপনাতেই চলে এলাম। যা অবস্থা দেখছি, না এসে পারলাম না।
: শরীরটা বড়োই খারাপ করেছে রে বাবা।
: আপনি ডাক্তারের কাছে যাবেন না, টাকাপয়সা নেবেন না, আমি কী করব, বলুন?
: তা তো ঠিকই, তুমি আর কী করবে।
: আপনার অবস্থা দেখে মনটাই খারাপ হয়েছে। নিজ থেকেই আমি আপনার জন্য একটা জিনিস এনেছি। এটা আপনাকে নিতে হবে। না নিলে খুব রাগ করব।
: কী জিনিস?
: একটা পরশপাথর নিয়ে এসেছি।
: সে কী! পরশপাথর কি সত্যি সত্যি আছে নাকি?
: থাকবে না কেন? এই তো, দেখুন। হাতে নিয়ে দেখুন।
নিশানাথবাবু পাথরটা হাতে নিলেন। পায়রার ডিমের মতো ছোটো। কুচকুচে কালো একটা পাথর। অসম্ভব মসৃণ।
: এটাই বুঝি পরশপাথর?
: জি। এই পাথর ধাতুর তৈরি যে-কোনো জিনিসের গায়ে লাগালে সেই জিনিস সোনা হয়ে যাবে। দাঁড়ান, আপনাকে দেখাচ্ছি।
দৈত্য খুঁজে খুঁজে বিশাল এক বালতি নিয়ে এল। পরশপাথর সেই বালতির গায়ে লাগাতেই কাঁচা হলুদ রঙের আভায় বালতি ঝকমক করতে লাগল।
: দেখলেন?
: হ্যাঁ, দেখলাম। সত্যি সত্যি সোনা হয়েছে?
: হ্যাঁ, সত্যি সোনা।
: এখন এই বালতি দিয়ে আমি কী করব?
: আপনি অদ্ভুত লোক, এই বালতির কত দাম এখন জানেন? এর মধ্যে আছে কুড়ি সের সোনা। ইচ্ছা করলেই পরশপাথর ছুঁইয়ে আপনি লক্ষ লক্ষ টন সোনা বানাতে পারেন।
নিশানাথবাবু কিছু বললেন না, চুপ করে রইলেন। দৈত্য বলল, আলাউদ্দিনের চেরাগ যে-ই হাতে পায়, সে-ই বলে পরশপাথর এনে দেবার জন্য। কাউকে দিই না।
: দাও না কেন?
: লোভী মানুষদের হাতে এসব দিতে নেই। এসব দিতে হয় নির্লোভ মানুষকে। নিন, পরশপাথরটা যত্ন করে রেখে দিন।
: আমার লাগবে না। যখন লাগবে তোমার কাছে চাইব।
নিশানাথবাবু পাশ ফিরে শুলেন।
পরদিন জ্বরে তিনি প্রায় অচৈতন্য হয়ে গেলেন। স্কুলের স্যাররা তাকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলেন। ডাক্তাররা মাথা নেড়ে বললেন-
: অবস্থা খুবই খারাপ। রাতটা কাটে কি না সন্দেহ।
নিশানাথবাবু মারা গেলেন পরদিন ভোর ছটায়। মৃত্যুর আগে নান্দিনা হাইস্কুলের হেডমাস্টার সাহেবকে কানে কানে বললেন, আমার ঘরে একটা বড়ো বালতি আছে। ওইটা আমি স্কুলকে দিলাম। আপনি মনে করে বালতিটা নেবেন।
: নিশ্চয়ই নেব।
: খুব দামি বালতি...
: আপনি কথা বলবেন না। কথা বলতে আপনার কষ্ট হচ্ছে। চুপ করে শুয়ে থাকুন।
কথা বলতে তার সত্যি সত্যি কষ্ট হচ্ছিল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। বালতিটা যে সোনার তৈরি এটা তিনি বলে যেতে পারলেন না।
হেডমাস্টার সাহেব ওই বালতি নিয়ে গেলেন। তিনি ভাবলেন- বাহ্, কী সুন্দর বালতি! কী চমৎকার ঝকঝকে হলুদ! পেতলের বালতি, কিন্তু রংটা বড়ো সুন্দর।
দীর্ঘদিন নান্দিনা হাইস্কুলের বারান্দায় বালতিটা পড়ে রইল। বালতি-ভরতি থাকত পানি। পানির ওপর একটা মগ ভাসত। সেই মগে করে ছাত্ররা পানি খেত।
তারপর বালতিটা চুরি হয়ে যায়। কে জানে এখন সেই বালতি কোথায় আছে!

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও

বুড়ো হাশমত বলল, তুমি আর কী কইরবা পণ্ডিত। তুমি তো এমনেও বহুত কইরছ। বিয়া কর নাই, শাদি কর নাই। সারা জীবনটাই তো কাটাইছ ওই স্কুলের পেছনে।

রাত একটায়
ভোর তিনটায়
ভোর পাঁচটায়
ভোর ছয়টায়

লেখক-পরিচিতি

249

হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে নেত্রকোনা জেলায় তাঁর জন্ম। উপন্যাস, ছোটোগল্প, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনি ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি মিলিয়ে তাঁর বইয়ের সংখ্যা প্রচুর। নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও তিনি বিখ্যাত। হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হাস্যরস ও নাটকীয়তা। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস- 'নন্দিত নরকে', 'শঙ্খনীল কারাগার', 'এইসব দিনরাত্রি' প্রভৃতি। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে তিনি লিখেছেন 'আগুনের পরশমণি', 'শ্যামল ছায়া', 'জোছনা ও জননীর গল্প' প্রভৃতি উপন্যাস। শিশুকিশোরদের জন্য লেখা বইগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য- 'বোতল ভূত', 'তোমাদের জন্য ভালোবাসা' প্রভৃতি। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন।

Content added By

পাঠ-পরিচিতি ও মূলভাব

548

নিশানাথবাবু গণিতের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল-শিক্ষক। চোখে কম দেখেন। স্ত্রী-সন্তান বেঁচে না-থাকায় তিনি নিঃসঙ্গ একজন মানুষ। একদিন তাঁর ছেঁড়া চটির পেরেক উঁচু হয়ে যাওয়ায় চটিজোড়া ব্যবহারে অসুবিধা হচ্ছিল। পরে ঘরের জঞ্জাল থেকে একটা ধাতব পুরোনো চেরাগ খুঁজে পেয়ে সেটা দিয়ে জুতোতে বাড়ি দিতেই আলাউদ্দিনের দৈত্য এসে হাজির হয়। নিশানাথবাবু চাইলেই দৈত্যের কাছ থেকে মূল্যবান অনেক কিছু পেতে পারতেন; কিন্তু তিনি কিছু চাননি। সম্পদের লোভ তাঁকে স্পর্শ করেনি। তাই তিনি দৈত্যের কাছ থেকে কোনো বাড়তি সুবিধা নিতে রাজি নন। তাঁর প্রাক্তন সহকর্মীরা চাঁদা তুলে তাঁকে সাহায্য করে। সে টাকা নিতেও তিনি লজ্জা পান। দৈত্য স্বেচ্ছায় নিশানাথবাবুকে পরশপাথর দিতে চায়। তা গ্রহণেও তিনি অস্বীকৃতি জানান। এ-গল্পে হুমায়ূন আহমেদ আরব্য-রজনীর গল্পের দৈত্য-চরিত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের একজন সাধারণ শিক্ষকের সম্পর্ক দেখান। লেখকের কল্পনাপ্রতিভা ও প্রকাশভঙ্গির নৈপুণ্যে গল্পে উঠে এসেছে একজন নির্লোভ মানুষের ছবি, দারিদ্র্যে যিনি কষ্ট ভোগ করলেও থেকেছেন লোভহীন ও মহৎ।
মনুষ্যত্বের প্রবল শক্তি এ-গল্পে দারিদ্র্যকে পরাজিত করেছে। গল্পটি আমাদের আত্মসম্মানবোধ, নির্লোভ মানসিকতা ও মহত্ত্বের শিক্ষা দেয়।

Content added By

শব্দার্থ ও টীকা

290

চেরাগ - বাতি; প্রদীপ।
আলাউদ্দিনের চেরাগ - আরব দেশে একটি গল্প প্রচলিত আছে। সে গল্পে একটি বিশেষ চেরাগের উল্লেখ আছে, যা ঘষলে চেরাগ বা প্রদীপ থেকে দৈত্য বেরিয়ে আসে। সে দৈত্য চেরাগের মালিকের অধীন হয়ে যায়। মালিকের সব ইচ্ছা পূরণ করে এ দৈত্য। চেরাগের মালিক ছিল আলাউদ্দিন।
রিটায়ার - চাকরি শেষ হওয়ার পর অবসর নেওয়া। ইংরেজি Retire.
চোখের ছানি -চোখের একধরনের রোগ। চোখের ওপর হালকা আবরণ যা চোখের দৃষ্টিকমিয়ে দেয়।
ব্ল‍্যাকবোর্ড - শ্রেণিকক্ষে চক দিয়ে লেখা হয় যেখানে। শ্রেণিকক্ষে কাঠের তৈরি এমন বোর্ড, যার ওপর চক দিয়ে লেখা বা ছবি আঁকা যায়। ইংরেজি Blackboard.
টাইফয়েড - এক ধরনের পানিবাহিত রোগ। বিশেষ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়, এমন রোগ। ইংরেজি Typhoid.
কামরা - কক্ষ।
লক্কর - ব্যবহারের অযোগ্য এমন পুরোনো জিনিস।
ঠাসা - বেশি বোঝাই করা। গাদাগাদি করে রাখা।
ডেগচি - রান্নার পাত্র।
বাসনকোসন - রান্নার বিভিন্ন সামগ্রী।
জঞ্জাল - আবর্জনা।
কেরোসিনের স্টোভ - একধরনের চুলা, যাতে জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন ব্যবহার করা হয়।
চটি - চামড়ার তৈরি পাতলা জুতা বা স্যান্ডেল।
ক্রমাগত - একের পর এক।
হাতুড়ি - লোহার তৈরি যন্ত্রবিশেষ, যা পেরেক ঠোকার কাজে ব্যবহৃত হয়।
মেঘগর্জন - মেঘের ডাক।
তালিম - শিক্ষা, উপদেশ। এখানে হুকুম বা উপদেশ পালন করার অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে ।
বিশ্রী - অসুন্দর।
বেজার - বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট।
স্তম্ভিত - বিস্ময়ে হতবাক হওয়া।
গম্ভীর গলায় - কণ্ঠ শুনতে ভারী মনে হওয়া।
সোনার মোহর - সোনার তৈরি মুদ্রা।
মশারি খাটিয়ে - মশারির উপরের চারদিক আটকানো।
কায়দা - কৌশল।
মুগ্ধ - খুশিতে মোহিত হওয়া।
অদ্ভুত মানুষ - দেখতে স্বাভাবিক মানুষের মতো নয় এমন।
রূপকথা - এক ধরনের অসম্ভব কাল্পনিক কাহিনি।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস - বড়ো কোনো কষ্ট পেয়ে গভীরভাবে ও শব্দ করে শ্বাস ত্যাগ করা।
পরশপাথর - কাল্পনিক একধরনের পাথর, যা দিয়ে স্পর্শ করলে যেকোনো ধাতব পদার্থ বা বস্তু স্বর্ণে পরিণত হয়।
পায়রা
কবুতর।
অসম্ভব মসৃণ - খুবই কোমল বা নরম।
হলুদরঙের আভায় -দেখতে হলুদের মতো আলোর রং।
কুড়ি -বিশ।
লোভী - যে বেশি চায়।
নির্লোভ - লোভ নেই এমন ব্যক্তি। যার কোনো চাওয়া নেই। লোভহীন।
অচৈতন্য - জ্ঞান বা চেতনা হারানো। অচেতন, সংজ্ঞাহীন।

Content added || updated By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...